সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে যে কোনো কাজ করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখতে যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘কাজ কোনোটাই ছোট নয়। কাজ করে নিজের অর্থ নিজে উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা অত্যন্ত গর্বের। কারণ কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখি না। কোনো কাজকে আমরা ছোট করে দেখব না। এই মানসিকতা ধারণ করতে পারলে কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
মঙ্গলবার ‘জাতীয় যুব দিবস-২০২২’ উদ্বোধন এবং ‘জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি তিনি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করব নিজের শক্তি, মেধা সম্পদ দিয়ে। এই চিন্তা আমাদের যুবকদের মাঝে সবসময় থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুবকদের উপযুক্ত কর গড়ে তুলতে চাই। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সারা দেশে আমরা হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, বিশেষায়িত ল্যাব, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছি, যেখানে আমাদের যুব সমাজ প্রশিক্ষণ নিতে পারে। কারণ আমি বিশ্বাস করি আমাদের যুব সমাজ মেধাবী এবং তারা সব কাজেই পারদর্শিতা দেখাতে পারবে। আর যুবকদের কর্মসংস্থানে আমরা সমগ্র বাংলাদেশে ১শ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থা বলছে বিশ্বে আগামীতে খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। এর থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে হলে আমাদের প্রতি ইঞ্চি জমি যেমন আবাদ করতে হবে, তেমনি খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি যুব সমাজকে আহ্বান জানাই, তারা যেন খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে নিজেদের সম্পৃক্ত করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে আমরা যেমন নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারব, তেমনি অনেক দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশকে সহায়তা করতে পারব। আমাদের মাটি উর্বর। আমাদের জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়াতে হবে। করোনার সময় ছাত্রদের আহ্বান জানালে তারা কৃষকদের ধান কেটে দিয়েছে যা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। ঠিক এভাবেই যুব সমাজ যে কোনো কাজ করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখবে, যা আমাদের দেশকে উন্নত করবে।’
তিনি বলেন, ‘যুবকদের মাঝে নেতৃত্বের যে গুণাবলি ও প্রতিভা আছে তা যেন বিকশিত হয় এবং তাদের কর্মক্ষমতা যেন দেশের কাজে লাগে সেজন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতি জেলা-উপজেলায় যুব কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা যেন কাজ করতে পারে, আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ একটি প্রশিক্ষিত যুবশ্রেণি গড়ে তোলা একান্তভাবে অপরিহার্য। তবে আমাদের দেশে এখন কত প্রশিক্ষিত যুব শ্রেণি রয়েছে তার একটি ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এটা হলে বোঝা যাবে কারা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে এবং কারা বাইরে রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তিই আমাদের যুব সমাজ। আর আজকে পৃথিবীর অনেক দেশই বয়োবৃদ্ধের দেশ হয়ে গেছে। এখনো বাংলাদেশের একটা বিরাট কর্মক্ষম যুব সমাজ রয়ে গেছে, যেটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। যুব সমাজের এই শক্তিকে কাজে লাগাতেই আমরা ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে স্লোগান রাখি-‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি।’
৬৪টি জেলায় ৬৪ হাজার যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে ঋণ দেওয়ার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই উদ্যোগটি সময়োপযোগী। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ছে। আমরা দেশকে বাঁচাতে পারব, যদি আমরা বায়োগ্যাস প্লান্ট এবং সৌরশক্তি স্থাপন করতে পারি।’
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহ উদ্দিন ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম খানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ‘জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ী ২১ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার হিসেবে একটি ক্রেস্ট, সনদ এবং নির্দিষ্ট মূল্যমানের চেক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতীয় যুব দিবসের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি এবং এর থিম সং পরিবেশিত হয়।
প্রতিবছর ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস পালিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে-‘প্রশিক্ষিত যুব উন্নত দেশ : বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’