বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন

রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি

স্পোর্টস ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২
  • ৩৮ বার পঠিত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করছেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়, যারা এই প্রশ্নটা করেন তাদের বলছি রিজার্ভের টাকা গেল পায়রাবন্দরে। রিজার্ভের টাকা গেছে দেশের জনগণের জন্য খাদ্য কেনায়, সার কেনায়। রিজার্ভের টাকা জনগণের কল্যাণে এবং আমদানিতে ব্যয় হয়েছে। কেউ এই অর্থ আত্মসাৎ বা অপব্যবহার করেনি। এ টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি। মানুষের কাজেই লাগছে।

নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন পায়রা সমুদ্রবন্দরে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রকল্প এলাকা পটুয়াখালী জেলার পায়রায় যুক্ত হয়ে ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-পায়রা সমুদ্রবন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ আটটি জাহাজের উদ্বোধন, প্রথম টার্মিনাল ও ছয় লেনের সংযোগ সড়ক এবং একটি সেতু নির্মাণ। এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্দরটিকে তার পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করতে সহায়তা করবে এবং দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে, যার সুফল জাতি যুগ যুগ ধরে ভোগ করবে।

নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহাইল অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, সামান্য সার্ভিস চার্জে এই টাকা বন্দর কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসাবে দেওয়া হয়েছে এবং ঘরের টাকা ঘরেই থাকছে, কেবল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হয়েছে। নৌরুট উন্নয়নের জন্য গৃহীত প্রকল্পগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও প্রাণবন্ত, শক্তিশালী ও উন্নত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রাবন্দর নামটি তারই দেওয়া। তার সরকার এখানে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে এবং এই বন্দরে কয়লার জাহাজ আনয়নের মাধ্যমেই বন্দরের জাহাজ চলাচল শুরু হয়। তার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল নিজস্ব অর্থায়নে এটি করবেন। কারণ বিদেশি অর্থে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। যে কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের টাকা দিয়েই তিনি একটি ফান্ড তৈরি করেন। যার নামও তিনি নিজেই রাখেন ‘বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ (বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল) এবং সেই ফান্ডের টাকা দিয়েই বন্দরের ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এই বন্দরটাকেই এক সময় আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দরে উন্নীত করতে পারব ইনশাআল্লাহ। ইতোমধ্যে মাতারবাড়ী ও মহেশখালীতে যে বন্দর আছে সেটাও গভীর সমুদ্রবন্দরেই রূপান্তর হয়েছে। পাশাপাশি পায়রাবন্দরকেও ভবিষ্যতে আমরা সেভাবে উন্নত করতে পারব। সেই বিশ্বাস আমার আছে। ?

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আজ সত্যিই খুব আনন্দিত। আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে তৈরি করা ফান্ড, সেই ফান্ডের টাকা দিয়েই আমরা এই কাজ আজকে শুরু করতে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে এই বন্দরে ২৬০টি বৈদেশিক বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন করেছে এবং এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ৬১৩ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আমি মনে করি এটা কিন্তু প্রতিবছরই ড্রেজিং করতে হবে। ইতোমধ্যে রেল যোগাযোগ যাতে হয় সেই সমীক্ষাও চলছে। ভবিষ্যতে আমাদের পরিকল্পনা আছে, একেবারে ঢাকার সঙ্গে পায়রাবন্দর পর্যন্ত আমরা রেল যোগাযোগ চালু করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বন্দরের কানেকটিভিটি সম্প্রসারণের সঙ্গে এটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক করিডরের সঙ্গে আরও বেশি সংযুক্ত হবে এবং ভারত, ভুটান, নেপালসহ অন্যান্য দেশ এই বন্দর ব্যবহার করে উপকৃত হবে। ফলে এ দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। শুধু তাই নয়, বন্দরকেন্দ্রিক এই অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপিত হবে। পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে এবং বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্দরের ৮টি জাহাজের মধ্যে ৭টিই বিভিন্ন দেশীয় শিপইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়েছে। এসব জাহাজের দ্বারা পায়রাবন্দর এককভাবে বিদেশি জাহাজ হ্যান্ডেলিং এবং চ্যানেলের সংরক্ষণ করতে পারছে। তিনি বলেন, পায়রাবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ৬৫০ মিটার দীর্ঘ এ টার্মিনালটিতে ২০০ মিটারের তিনটি জাহাজ একত্রে ভিড়তে পারবে এবং একই সঙ্গে কনটেইনারাইজড্ কার্গো ও বাল্ক কার্গো হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। টার্মিনালটি থেকে পণ্য সড়কপথে পরিবহণের জন্য ছয় লেনবিশিষ্ট সংযোগ সড়ক ও আন্ধারমানিক নদীর ওপর দিয়ে ব্রিজ তৈরির কাজটিও আজ উদ্বোধন হলো। বন্দরটির সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ বাড়াতে আমরা শিগগিরই ঢাকা-কুয়াকাটা সড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারা দেশে প্রত্যেকটা ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছিলাম, তবে বর্তমানে বিশ্বপরিস্থিতি আপনারা দেখছেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের উন্নত দেশগুলো আজকে জ্বালানি সংকটে ভুগছে, বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে। আমরাও তার থেকে বাইরে নই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে করোনার প্রভাব, এর ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সেই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার পর নিষেধাজ্ঞা। যার ফলে আজকে বিশ্বের সাধারণ মানুষগুলো ভুক্তভোগী। তারা কষ্টে আছে। সরকারপ্রধান বলেন, এতে কারা লাভবান হচ্ছে জানি না। কাজেই আমার আবেদন থাকবে বিশ্ববাসীর কাছে যে, এই যুদ্ধটা বন্ধ করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। মানুষকে বাঁচার সুযোগ দিতে হবে, জীবনমান ধরে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়াপ্রান্তে এ উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা বন্দরের নৌবহরে সংযুক্ত হওয়া আটটি নৌযানের দর্শনীয় মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত অতিথিসহ এলাকার জনসাধারণ করতালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..