শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ০৬:৩১ অপরাহ্ন

৭৫-এ মানবাধিকার কোথায় ছিল: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২
  • ৬৯ বার পঠিত
ছবি: সংগৃহিত

ছোট ভাইকে স্মরণ করতে গিয়ে পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে বছরের পর বছর কাঠখড় পোড়ানোর কথা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট নিরপরাধ নারী ও শিশু হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছিল, যাতে খুনিদের বিচার না হয়। আজকে আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকারের কথা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ-কত কিছুই তো হয়। সেখানে আমার প্রশ্ন-তখন কেউ তো আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং ঘাতকদের সঙ্গে ছিল কিছু লোক। তারাই ঘাতকদের পুরস্কৃত করেছে, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছে। এমনকি যে ঘাতক মরে গেছে তাকেও প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। এ অবিচারগুলো তো আমি এসে (দেশে ফিরে) দেখেছি। তাহলে আমরা মানবতার, মানবাধিকারের এত গালভরা কথা শুনি কেন? আমার প্রশ্নের জবাব কি কেউ দিতে পারবেন?

মঙ্গলবার শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ‘শেখ রাসেল পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে সেনাশাসক জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ বা খালেদা জিয়া-প্রত্যেকেই খুনিদের মদদ দিয়েছে, পুরস্কৃত করেছে। এমনকি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন খুনি পাশা এবং হুদাকে নিয়ে ‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি (প্রগশ)’ নামে রাজনৈতিক দল করেছিল। জেনারেল এরশাদ খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছে। আর খালেদা জিয়া রশিদ এবং হুদাকে জনগণের ভোট চুরি করে ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত করে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসায়। আর আজকে তারা ভোটের কথা বলে!

বক্তব্যে তিনি শিশুদের জন্য সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী চাই। আমরা যুদ্ধ চাই না, ধ্বংসযজ্ঞ, অস্ত্র ব্যবসা, কোনো শিশুকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করুক এবং কাউকে গুলি করে হত্যা করা হোক-এটা আমরা চাই না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে শিশুরা এতিম হচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে। তাই আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই প্রত্যেকের ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক, উন্নত হোক। শিশুদের ওপর বর্বরতা চলে, রাসেলের মতো শিশুকে যেখানে জীবন দিতে হয়-এ সমাজ আমরা চাই না।’

তিনি বলেন, ‘৭৫-এর পর দেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে হাজারো অফিসার-সৈনিক হত্যা করা হয়েছে। স্বজনরা তাদের লাশও পাননি। কারণ লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন, কারাভোগ করেছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন। কাজেই আর আমরা স্বজন হারানোদের কান্না শুনতে চাই না।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা চাই প্রত্যেকের ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক, উন্নত হোক। আজ আমরা পাঁচ হাজার কম্পিউটার ল্যাব এবং ৩০০টি স্কুল অফ ফিউচার উদ্বোধন করলাম। এর আগে আরও আট হাজার করেছিলাম, প্রায় ১৩ হাজার ডিজিটাল ল্যাব করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকের শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণধার। আজকের শিশুরাই এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। মানবাধিকার যেন লঙ্ঘন না হয়, কোনো শিশু যেন নির্যাতিত না হয়। প্রত্যেকেই যেন সুন্দর জীবন পায় সেটাই আমরা চাই। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সম্পাদিত ‘দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর লেখা ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের ট্রেলারও প্রদর্শিত হয়।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিব কেএম শহীদুল্লাহ ও শিশু বক্তা আফসা জাফর সৃজিতা।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিজয়ীদের মধ্যে ‘শেখ রাসেল পদক-২০২২’ বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। পরে শিশুদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: শিশুর মাঝে আজও আমি রাসেলকে খুঁজি: প্রধানমন্ত্রী

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..