আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শীতকালীন ছুটির পরে আবার খুলেছে। কিন্তু ছাত্ররা ফিরলেও ফিরছে না ছাত্রীরা। ঘটনাটি নারীদের কাছে বেশ বেদনাদায়ক, কারণ তারা দেখছে তাদের পৃথিবী কিভাবে সংকুচিত হয়ে আসছে।
আরো পড়ুন: পুরুষরা শারীরিক সম্পর্কে দুর্বল : কঙ্গনা
দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছরের শেষের দিকে ঘোষণা দিয়েছিল, নারীরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরতে দেওয়া হবে না। ২০১২১ সালে কাবুলে তালেবান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর নারীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়, এমন নীতিগুলোকে উল্টে দেওয়া হয়।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের চতুর্থ বর্ষের একজন ছাত্রী বলেছেন, ‘এখন আমি কেউ না। আমার পরিকল্পনা ছিল ইউনিভার্সিটি শেষ করব, মাস্টার্স করব, তারপর পিএইচডি করব। আমি কাজ করতে চেয়েছিলাম আমার জাতি, আমার মানুষ, আমার দেশের জন্য। আমি এখন তা করতে পারছি না।’
মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি এবং তার বন্ধুরা কিভাবে স্নাতকের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। বেশ কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে কথা বলে বিবিসির এই সংবাদদাতা জানিয়েছেন- আগের সুখের স্মৃতিগুলো মনে করে তারা কেঁদেছেন। আরো কেঁদেছেন যখন তাদের ভাই এবং কাজিনদের আবারও পড়াশোনা শুরু করতে দেখেন।
আতেফা নামে একজন ছাত্রী, যিনি একমাত্র বিবিসির প্রতিবেদনে নিজের নাম ব্যবহার করতে অনুমতি দিয়েছেন। ১৯ বছর বয়সী আতেফা কম্পিউটারবিজ্ঞানের ছাত্রী। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো স্মৃতিই তৈরি করার সুযোগ পাননি। কারণ তিনি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল, ওয়েবসাইট ডেভেলপার হওয়ার, কিন্তু ‘সবই নষ্ট হয়ে গেছে’ বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধুরা এবং আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য অনেক কষ্ট করেছিলাম। কিন্তু আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না… এটা শেষ হয়ে গেছে।
তালেবান সরকার আফগান নারীদের জন্য অনেক কিছুরই সমাপ্তি ঘটিয়েছে। কারণ তালেবান সরকার তাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা ক্রমাগত কমিয়ে দিচ্ছে। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের আগেই গত বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকেও মেয়েদের বাদ দেওয়া হয়।এই বিষয়ে বেশ কয়েকজন তালেবান কর্মকর্তা বলছেন, এটা সাময়িক, দীর্ঘদিনের জন্য নয়। তারা এ ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন। যেমন- পোশাক পরার নিয়ম লঙ্ঘন থেকে শুরু করে অর্থের অভাব, ইসলামিক লাইনে সিলেবাস পুনর্নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি।
বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা করার ব্যবস্থা চালু করেছে। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের একজন থিয়েটার শিক্ষার্থী বলেন, ‘যদি তারা আমাদের হিজাব পরতে বলে তাতেও আমরা খুশি। আমাদের যদি আলাদা ক্লাসে বসতে হয় তাতেও খুশি। কিন্তু আমাদের শেখার সুযোগ দিন।’
এই নিষেধাজ্ঞা পুরুষ ছাত্রদের জন্যও বেদনাদায়ক হয়েছে। তাদের একজন বলেন, ক্লাসে ফেরা একটা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মতো মনে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘অনুভূতি হচ্ছিল- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ মারা গেছেন। সবাই সত্যিই বিচলিত ছিল। কারণ আমি জানি… কিন্তু আমি কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ আমি কথা বললে তালেবান সরকার আমাকে গ্রেপ্তার করবে।
আফগানিস্তানে এখন মেয়েরা শুধু প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। এই বিষয়ে এক তরুণ বলেন, ‘শুধু পুরুষদের নিয়ে আমাদের দেশ গড়া যাবে না। নারীদেরও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার সুযোগ প্রয়োজন।
আরো পড়ুন: সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল পৌঁছেছে গুলিস্তানে
এ জাতীয় আরো খবর..