মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০২৩, ১০:০৪ অপরাহ্ন

আমল নিষ্ফল হওয়ার কারণ

অনলাইন রিপোর্টার
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩
  • ২৫ বার পঠিত

কিয়ামতের দিন আমি তাদের (কাজের) জন্য কোনো ওজন কায়েম করব না (অর্থাৎ তাদের এসব আমাল ওজনযোগ্য হিসেবে গণ্য করা হবে না)। এটিই তাদের প্রতিফল জাহান্নাম। কারণ তারা কুফরি করেছে আর আমার নিদর্শন ও রাসূলদেরকে হাসি-তামাশার বিষয় বানিয়েছে। (সূরা কাহাফ : ১০৩-১০৬)

আরো পড়ুন:গতিরোধক নির্মাণের দাবিতে সড়ক অবরোধ

কুরআন-সুন্নাহ গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, মহান আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত দিবসে পৃথিবীর সব মানুষকে মৌলিকভাবে চার ভাগে বিভক্ত করে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন।

প্রথমত, যারা পৃথিবীর জীবনে মোটেও ঈমান গ্রহণ করেনি। যতই ভালো কাজ করুক না কেন তারা হিসাব ব্যতীতই জাহান্নামে যাবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন- ‘বলুন! আমি তোমাদেরকে কি সংবাদ দেবো নিজেদের আমলের ক্ষেত্রে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত?

তারা হলো সেসব লোক; দুনিয়ার জীবনে যাদের চেষ্টা সাধনা ব্যর্থ হয়ে গেছে আর তারা নিজেরা মনে করছে যে, তারা সঠিক কাজই করছে। তারা হলো সেসব লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন ও তাঁর সাথে সাক্ষাৎকে অমান্য করে। যার ফলে তাদের যাবতীয় আমল নিষ্ফল হয়ে গেছে।

দ্বিতীয়ত, ‘যারা পৃথিবীতে ঈমান গ্রহণ করেছিল। তাদের ৭০ হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (সহিহ বুখারি-৫৭৫২) তৃতীয়ত, ‘যারা ঈমান গ্রহণ করেছিল এবং দুনিয়ার জীবনে নেক ও পাপ উভয়টিই করেছে তবে তাদেরও আল্লাহ তায়ালার দয়া বা কোনো নবী বা শহীদ কিংবা নাবালক শিশু অথবা রোজা বা নেককার মানুষ কিংবা কুরআন এবং বিভিন্ন নেক আমলের সুপারিশের মাধ্যমে জান্নাত দেয়া হবে।

চতুর্থত, ‘যারা ঈমান এনেছিল বটে এমন কিছু মারাত্মক গুনাহ দুনিয়ার জীবনে করেছিল এবং তাদের ভাগ্যে আল্লাহর দয়া বা কোনো সুপারিশ না জোটার কারণে তাদের সরাসরি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে হবে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে সাজা ভোগ করতে হবে। যেসব গুনাহের কারণে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে সে গুনাহগুলোর কয়েকটি নিম্নরূপ-

১. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা : যারা অন্যায়ভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে তাদের যতই নেক আমল থাকুক না কেন; প্রথমে তাদের জাহান্নামে যেতেই হবে। এ সম্পর্কে হজরত যুবাইর ইবনে মুতইম রা: থেকে বর্ণিত- তিনি নবী করিম সা:-কে বলতে শুনেছেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (বুখারি-৫৯৮৪)

অন্য বর্ণনায় হজরত আয়েশা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক আল্লাহর আরশের সাথে ঝুলন্ত রয়েছে। সে বলে, যে ব্যক্তি আমার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখবেন। আর যে আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আল্লাহ তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবেন।’ (মুসলিম-৬৪১৩)

২. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া : এ সম্পর্কে হজরত আবু হোরায়রা রা: সূত্রে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম-৭৬) অপর এক হাদিসে আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! অমুক মহিলা বেশি বেশি (নফল) সালাত পড়ে এবং সিয়াম রাখে ও দানখয়রাত করে বলে উল্লেখ করা হয়; কিন্তু সে নিজ জবান দিয়ে (অসভ্য কথা বলে বা গালি দিয়ে) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। তার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? তিনি বললেন, ‘সে জাহান্নামে যাবে’। লোকটি আবার বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! অমুক মহিলা অল্প (নফল) সালাত পড়ে ও সিয়াম রাখে এবং দানখয়রাত করে বলে উল্লেখ করা হয়; কিন্তু সে নিজ জবান দিয়ে (অসভ্য কথা বলে বা গালি দিয়ে) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। তার ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? তিনি বললেন, ‘সে জান্নাতে যাবে।’ (মুসনাদে আহমাদ-৯৬৭৫) এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, প্রতিবেশী যে ধর্মের বা বর্ণেরই হোক না কেন কোনোভাবেই তাকে কষ্ট দেয়া জায়েজ হবে না।

৩. অহঙ্কার করা। এটি এমন একটি মারাত্মক গুনাহ যা আমলনামায় থাকলে যতই নেকি থাকুক আগে জাহান্নামে যেতে হবে। আমাদের চিরচেনা শত্রু ইবলিস একমাত্র অহঙ্কারের জন্যই অভিশপ্ত হয়েছিল। এ বিষয়ে কুরআনুল কারিমে একাধিক আয়াত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘নিশ্চয় আল্লাহ কোনো উদ্ধত, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা লোকমান-১৮) হাদিসে কুদসিতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘অহঙ্কার হলো আমার চাদর এবং মহত্ত্ব হলো আমার লুঙ্গি। যে কেউ এর কোনো একটি নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (সুনানে আবু দাউদ-৪০৯০)

৪. অধীনস্থদের হক আদায় না করা ও খিয়ানত করা: আমরা প্রত্যেকেই স্বীয় জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ও এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সচেতন থাকা আবশ্যক যেন কারো হকের ব্যাপারে খিয়ানত না হয়ে যায়। কেননা হাদিসে এসেছে হজরত হাসান বসরি রহ: থেকে বর্ণিত- আমরা মা’কিল ইবনে ইয়াসারের কাছে তার সেবা-শুশ্রƒষার জন্য এলাম। এ সময় উবাইদুল্লাহ প্রবেশ করল। তখন মা’কিল রা: বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করে শোনাব যা আমি রাসূলুল্লাহ সা: থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, ‘কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি মুসলিম জনসাধারণের দায়িত্ব লাভ করল আর তার মৃত্যু হলো এই হালতে যে, সে ছিল খিয়ানতকারী। তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (বুখারি-৭১৫১)

এ ছাড়াও বহু গুনাহ এমন রয়েছে, যেগুলোর দ্বারা মানুষ মু’মিন হওয়া সত্ত্বে¡ও সর্বাগ্রে জান্নাতে না গিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

আরো পড়ুন:কবর জিয়ারত করা কর্তব্য

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..