সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবার এক দিনে রাজধানীর দুই প্রান্তে দুটি পদযাত্রা করল বিএনপি। গতকাল শুক্রবার পদযাত্রার একটি মতিঝিল-গোপীবাগ এবং অন্যটি উত্তরার জসীমউদদীন সড়ক থেকে শুরু করে কয়েক কিলোমিটার পথ হাঁটেন নেতাকর্মীরা।আরো পড়ুন: মেট্রোরেলের উত্তরা সেন্টার স্টেশন খুলে দেওয়া হলো
কর্মসূচিতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই—এটি এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাই যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায়নি। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে, তা বহির্বিশ্বেরও কেউ বিশ্বাস করে না। তাই দ্রুত পদত্যাগ করুন। নইলে জনগণ ব্যবস্থা নেবে।
মতিঝিলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে পদযাত্রা শুরু হওয়ার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন নিয়ে তাঁর দলের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ সফর করা কূটনীতিকদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আওয়ামী লীগের
নেতৃত্বে সরকারের অধীনে খুব ভালো নির্বাচন হবে, সবাই অবাধে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু এ সরকারের অধীনে বিএনপি ও জনগণ নির্বাচনে যাবে না। সেই নির্বাচন মেনে নেবে না। তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের একটাই কথা। দুই কথা, তিন কথা, চার কথা বলে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। এই মুহূর্তে সরকারের পদত্যাগ চাই। পদত্যাগ করুন, দেশের মানুষকে বাঁচতে দিন। অন্যথায় দেশের মানুষই তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েক দিন আগেও আওয়ামী লীগ বলত, বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না। এখন আন্দোলনের ভয়ে তারা পাহারা দেয়। পাহারা দিয়ে আন্দোলন ঠেকানো যাবে না, পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ পদযাত্রা করেছে। আজকে সত্যিকার অর্থেই এই সরকারের পদত্যাগের দাবি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু কেউ কিছু জানে না। যিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তিনিও জানতেন না। এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনই প্রমাণ করে যে এই সংবিধান দিয়ে দেশের সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য এই সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আমরা যে ২৭ দফা দিয়েছি, সেই দফার মধ্যে আমরা এই সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছি। আমরা বলেছি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে এবং সব মানুষের অংশ থাকে সেই ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থাকে কিভাবে স্থায়ী করা যায়, তার চিন্তা করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব।মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক সভাপতি আবদুস সালাম ও সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় গোপীবাগে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বক্তব্য দেন।
তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার এ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোও এদিন পৃথক কর্মসূচি পালন করে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে গোপীবাগ ওয়াক্তিয়া মসজিদের সামনে থেকে বিকেল ৪টায় পদযাত্রা শুরু করে। বিশাল পদযাত্রাটি মধুমিতা সিনেমা হল, টিকাটুলী, দয়াগঞ্জ, ধোলাইখাল মোড়, রায়সাবাজার মোড় হয়ে নয়াবাজারে নবাব ইউসুফ মার্কেট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে শেষ হয়।
এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে উত্তরার কবি জসীমউদদীন সড়ক থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে আজমপুর, রবীন্দ্র সরণি, ১২ নম্বর সেক্টর সড়ক হয়ে জমজম টাওয়ারের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এই পদযাত্রার আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দেশে গণতন্ত্র নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় সব দেশ আমন্ত্রণ পেলেও বাংলাদেশ পায়নি। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে—এটা জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র ও ছলচাতুরী করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।
মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ও সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আবদুল আউয়াল মিন্টু বক্তব্য দেন। দুই পদযাত্রায় বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, মত্স্যজীবী দল, ছাত্রদল, জাসাসের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে একই সময়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) কারওয়ান বাজার থেকে এবং গণফোরাম-পিপলস পার্টি মতিঝিলের ইডেন কমপ্লেক্সের সামনে থেকে পদযাত্রা করে।এ ছাড়া সকালে সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট বিজয়নগরে আল-রাজি কমপ্লেক্সের সামনে থেকে এবং পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট পুরানা পল্টন থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা করে।
আজ বিভাগীয় পর্যায়ে পদযাত্রা : ঢাকা মহানগর বাদে আজ শনিবার অন্যান্য বিভাগে বিএনপি পদযাত্রা করবে। এতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নেতৃত্ব দেবেন। দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেওয়া সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা