পাট পচনের মাধ্যমে অ-তন্তুযুক্ত টিস্যু এবং কাণ্ডের কাঠের অংশ থেকে আঁশ বা ফাইবারগুলো পৃথক এবং নিষ্কাশন করার প্রক্রিয়াকে রেটিং বা পাট পচন বলা হয়। এটি একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন রেটিং জীবাণুর ক্রিয়া দ্বারা সঞ্চালিত হয়।
আরো পড়ুনঃ নন্দীগ্রামে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে হত্যা
সাধারণত ধীর গতিতে চলমান পানিতে রেটিং বা পাট পচন সবচেয়ে ভালো হয় এবং ৯০% এরও বেশি পাট ও মেস্তা গাছকে স্থবির পানিতে চাষিরা রেটিং করে থাকেন। তবে একই প্রাকৃতিক রেটিং ট্যাঙ্কের স্থির পানিতে বারবার পাট ও মেস্তার পুনঃপুনঃ ব্যবহারের ফলে নিম্নমানের আঁশ পাওয়া যায়, যদি না প্রতিবার রেটিংয়ের পর ট্যাঙ্কটি বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পূরণ করা না হয়।
অধিকন্তু রেটিংয়ের সময়, বাংলাদেশের কিছু এলাকা, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে অনেক অংশ পানির অভাবের সম্মুখীন হয়। এ কারণে মৌসুমে পাট রেটিং সংকটে পড়েন কৃষকরা। তাই পাটের সবুজ আঁশ যদি শুকিয়ে সংরক্ষণ করে, পরবর্তী সময়ে আঁশ ছাড়ানো যেত, তবে সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান করা সম্ভব।
তা ছাড়া যদি শুকনো ছাল থেকে একই মানের ফাইবার পাওয়া যায়, তবে শুকনো বা সংরক্ষিত আঁশগুলো পুনরুদ্ধার করা কৃষকদের জন্য সহায়ক হতে পারে। সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে, আঁশ পাওয়ার জন্য মাইক্রোবিয়াল ইনোকুলামস বা কনসোর্টিয়া ব্যবহার একটি বিকল্প পাট পচন বা রেটিং কৌশল হতে পারে।
মাইক্রোবিয়াল কনসোর্টিয়া হল জীবমণ্ডল জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপাদান। জীবাণু প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভিদকে উপনিবেশ করে, উপকারী, ক্ষতিকারক বা নিরপেক্ষ মিথস্ক্রিয়া প্রদান করে। ইনোকুলাম প্রণয়ন হলো একটি সুপ্ত অণুজীব স্টককালচার থেকে অণুজীবের জনসংখ্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অণুজীবের একটি জনসংখ্যা প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া, যা একটি চূড়ান্ত উৎপাদনশীল পর্যায়ে ইনোকুলেশনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
জীবাণু জনসংখ্যা সরাসরি পরিবেশ থেকে বা উপলব্ধ স্টক থেকে সাবকালচারের মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। এই অণুজীবগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে, কিন্তু তাদের কার্যকলাপের ওপর নির্ভর করে। তাদের এনজাইম উৎপাদন ক্ষমতার ভিত্তিতে অণুজীব ইনোকুলাম প্রণয়ন করা যেতে পারে। তাই এই অণুজীব ইনোকুলামগুলো শুকনো বা সংরক্ষিত পাট ছালের ওপর প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই মাইক্রোবিয়াল ফর্মুলেশন শুধু রেটিংয়ের সময়কাল কমানোর জন্যই নয়, বরং আঁশ ফাইবারের গুণমানে কমপক্ষে দুই থেকে তিন গ্রেডের উন্নতির জন্যও উপযুক্ত।
অণুজীব ফর্মুলেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো পচন বা গাঁজন করার উদ্দেশ্যে মাইক্রোবিয়াল জনসংখ্যার বিশুদ্ধ অণুজীব কালচার সৃষ্টি করা। ধারণাটি শুধু অণুজীব ইনোকুলামের বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয় বরং বিশুদ্ধ অণুজীব কালচারের মধ্যেই বিভিন্ন প্রকারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আঁশ বা ফাইবার নিষ্কাশনের জন্য বাধ্যতামূলক মৌসুমী রেটিং অনুসরণ না করে প্রণয়নকৃত অণুজীব বা মাইক্রোবিয়াল ইনোকুলামগুলো উপযুক্ত সময়ে প্রয়োগ করা হলে পাটের সংরক্ষিত ছালের বা বাকলের ফাইবার নিষ্কাশনের জন্য অভিনব প্রযুক্তি বিকাশে সহায়তা করবে। যা সময় উপযোগী ও পাট পচনে পানি স্বল্পতা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
আরো পড়ুনঃ কিশোরগঞ্জের হাওরে আসছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ