‘আমার মেয়ে ফেলানীকে মেরে কাঁটা তাঁরে ঝুলায়ে রাখছিল বিএসএফ। আমি যেমন আমার মেয়ের জন্য ১২টা বছর ধরে কাঁদছি, আর যেন কোনো সন্তানের মা এভাবে না কাঁদে।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মৃত ফেলানীর মা জাহানারা বেগম।
আরও পড়ুন:সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার এক যুগ আজ শনিবার (৭ জানুয়ারি)। দেশ-বিদেশে আলোচিত এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আজও বিচার পায়নি এই পরিবার।
নূরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গিয়েছি কিন্তু ১২ বছরেও কাক্সিক্ষত বিচার পেলাম না। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই। দুই দেশের সরকারের কাছে আবেদন, ফেলানীহত্যার সুষ্ঠু বিচার যেন তারা করে দেয়। বিচারের অপেক্ষায় এখনো আছি।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বাবার সঙ্গে ভারত থেকে দেশে ফিরছিল নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামের কিশোরী ফেলানী। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭নং আন্তর্জাতিক ৩নং সাব পিলারের পাশে মই বেয়ে কাঁটাতার ডিঙ্গানোর সময় তাকে গুলি করেন ভারতের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ। কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর মরদেহের খবর আলোড়ন তোলে দুই দেশে।
ভারতের আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয় ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে কোচবিহার জেলার বিএসএফের ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস আদালত। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায়বিচারের আশায় চিঠি দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়ে যায়।
২০১৫ সালে আরও একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে বাংলাদেশের আইন ও শালিসকেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ। ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সে দেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনুরোধ করে। এর জবাবে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পর ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা ক্ষতিপূরণ মামলার শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ শুনানির দিন ধার্য হলেও তা আজো অনুষ্ঠিত হয়নি।
ফেলানীহত্যা মামলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন মানবাধিকার কর্মী ও কুড়িগ্রাম জেলা জজকৈার্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন। তিনি বলেন, ‘ফেলানীহত্যা মামলাটি ভারতের সুপ্রিমকোর্টে একযুগ ধরে চলছে। বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন। এতে করে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও গাড় হবে। অপরাধীর দায় নিশ্চয় রাষ্ট্র নেবে না।’