কানাডায় চলতি বছর গম উৎপাদন রেকর্ড সর্বোচ্চের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে বলে পূর্বাভাস মিলেছে। উল্টো দিকে কমতে পারে আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রধান বাজারগুলোর সরবরাহ। ফলে আগামী বছরের প্রথমার্ধে কানাডা বিশ্বের শীর্ষ গম সরবরাহকারী হয়ে উঠবে। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস।
আরও পড়ুনঃনেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন পুষ্পকমল
কানাডার পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে (আগস্ট-জুলাই) দেশটিতে ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন গম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। অনুকূল আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ দেশটি পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোয় শীর্ষ গম সরবরাহকারী হয়ে উঠতে পারে।
কানাডার ভ্যাঙ্কুভারভিত্তিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, বীজ বপন মৌসুমে নিম্নমুখী সরবরাহের কারণে শস্যটির দাম বেড়ে যায়। আকর্ষণীয় দামের কারণে ওই সময় কৃষক আবাদ বাড়ান। উৎপাদন বাড়ার পেছনে এ বিষয়টিকে প্রাথমিক কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এগ্রিকালচার অ্যান্ড এগ্রি-ফুড কানাডার দেয়া তথ্যমতে, উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি চলতি বছর রফতানিও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে ২ কোটি ৩৫ লাখ টন গম রফতানির প্রাক্কলন করা হয়েছে। আগের মৌসুমে যা ছিল ১ কোটি ৫১ লাখ টন।
গম উৎপাদন পরিস্থিতি বেশ আশাজাগানিয়া হলেও কিছু ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে জানিয়েছে কানাডার পরিসংখ্যান বিভাগ। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে দেশটির আলবার্টা, সাসক্যাচুয়ান ও ম্যানিটোবাসহ পশ্চিমের প্রদেশগুলোর উৎপাদন পূর্বাভাস প্রায় ১০ লাখ টন কমানো হয়েছে। তবে এটি জাতীয় উৎপাদনে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলেও প্রত্যাশা পরিসংখ্যান বিভাগের।
লাতিন আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ গম সরবরাহকারী দেশ হলো আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বৈরি আবহাওয়া পরিস্থিতি দেশ দুটির উৎপাদনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প উৎস হিসেবে বাড়ছে কানাডিয়ান গমের চাহিদা।
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে গমের ফলন কমেছে। এর ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে রফতানি কমারও। মার্কিন কৃষি বিভাগ (্ইউএসডিএ) বলছে, ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে দেশটির রফতানি আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কমতে পারে। রফতানির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ কোটি ৪১ লাখ টন।
২০২২-২৩ মৌসুমে প্রথম তিন মাসে চীন, ইন্দোনেশিয়া ও জাপানে কানাডার গম রফতানি লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বাণিজ্য অংশীজনরা। চলতি মৌসুমে চীন কানাডা থেকে ১১ লাখ টন গম আমদানি করেছে, যা ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমের তুলনায় প্রায় সাত লাখ টন বেশি।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক একটি কোম্পানির ব্যবসায়ীরা জানান, চীন বর্তমানে জিরো কভিডনীতি শিথিল করেছে। এর ফলে কানাডা থেকে দেশটির আমদানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এশিয়ার দেশগুলোর বাইরে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও রফতানি বাড়াবে কানাডা। এক্ষেত্রে আর্জেন্টিনায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় সুবিধা পাচ্ছে দেশটি। ২০২২-২৩ মৌসুমে আর্জেন্টিনায় ১ কোটি ১৮ লাখ টন গম উৎপাদন হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। এর আগের মৌসুমে যা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ টন। এছাড়া রফতানি ১ কোটি ৬৩ লাখ টন থেকে কমে এক কোটি টনে নামার আশঙ্কা রয়েছে।
উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ গম উৎপাদনে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া নেতৃস্থানীয়। অস্ট্রেলিয়া গম উৎপাদনে বিশ্বের ষষ্ঠ শীর্ষ এবং রফতানিতে পঞ্চম। কিন্তু খরাসহ আবহাওয়ার নানা সংকটের কারণে অস্ট্রেলিয়ার মাটির উর্বরা শক্তি কমেছে। ফলে বিশ্ববাজারে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির অস্ট্রেলিয়ান গমের সরবরাহ কমে যাওয়ার উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এর ফলে দেশটির ক্রেতারা কানাডার বাজারে ঝুঁকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্ববাজারে গম সরবরাহের ক্ষেত্রে কৃষ্ণসাগরীয় দেশগুলো বিশেষ করে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাপক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে পারে কানাডা। কারণ রাশিয়া এরই মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চল আকর্ষণীয় মূল্যছাড়ে কম দামে গম সরবরাহ করছে।
ইউএসডিএ জানায়, চলতি বছর রাশিয়ায় শস্যটির উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেড়ে ৯ কোটি ১০ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। রফতানির পরিমাণ এক কোটি টন বেড়ে পৌঁছতে পারে চার কোটি ৩০ লাখ টনে।
এদিকে এক বছর ধরেই কানাডিয়ান গমের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরই মূলত সরবরাহ সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিশেষ করে মে মাসে প্রতি টনের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৫৪১ ডলার ৭৯ সেন্টে পৌঁছায়। এর পর প্রতি মাসেই অব্যাহতভাবে দাম বেড়েছে। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যশস্য রফতানিসংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হলে মূল্যবৃদ্ধির এ গতি কিছুটা শ্লথ হয়।