গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম—উত্তর জনপদের নদী অবহিকা দুটো জেলা। এই দুই জেলার বুক চিরে দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। এখানকার হরিপুর ও চিলমারীর মাঝখানে নির্মাণ করা হচ্ছে স্বপ্নের তিস্তা সেতু। এগিয়ে চলছে প্রকল্পের কাজ। এটি বাস্তবায়ন হলে কুড়িগ্রামের সড়ক পথে ঢাকার দূরত্ব কমবে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। একই সঙ্গে পাল্টে যাবে গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম মানুষের জীবন বৈচিত্র্য। ইতোমধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ দৃশ্যমান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে এলাকার চিত্র।
তিস্তা সেতুর ২৯০টি পাইলের মধ্যে ১৭৫টি, গার্ডার ১৫৫টির মধ্যে ৭৪টি এবং ৩০টি পিলারের মধ্যে ১৪টি বাসনো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, তিস্তার এপারে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা এবং ওপারে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা। দুই জেলার মাঝপথ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দেড় কিলোমিটার প্রশস্ত তিস্তা নদী। বর্ষা আসলে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে রাক্ষুসে এ নদী।
দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষের পারাপারের একমাত্র উপায় খেয়াঘাট। দিনে খেয়াতে নদী পাড়ি দিতে পারলেও সন্ধ্যা নেমে এলেই বন্ধ হয়ে যায় সেই খেয়া। আরও নানা ভোগান্তির কবলে পড়তে হয় মানুষদের। এই অঞ্চলের ভুক্তভোগীদের দীর্ঘদিনের দাবিতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ঘাট থেকে তিস্তা নদীর ওপর দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত এক হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কুড়িগ্রাম, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, চিলমারী থেকে সড়কপথে ঢাকার দূরত্ব কমে আসবে প্রায় ১০০ কিলোমিটার। দূরত্ব কমবে বিভাগীয় শহর রংপুরের সঙ্গে। এতে বাঁচবে সময় ও অর্থ। পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের ধারা। ঘটবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ।
এলাকাবাসীর দাবির মুখে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ঘাট থেকে তিস্তা নদীর ওপর দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত এক হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।জানা যায়, গত ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা শহরের শাহ আবদুল হামিদ স্টেডিয়ামে হরিপুর ঘাটে তিস্তা নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এ সেতুটির নির্মাণের দায়িত্ব পায় চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন। আর এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে।
আগামী ২০২৩ সালের জুন মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।এই প্রকল্পে সেতুটির দক্ষিণ প্রান্তের সুন্দরগঞ্জ অংশের ২ কিলোমিটার সড়কসহ চিলমারী-ধর্মপুর-মন্ডলেরহাট-লক্ষ্মীপুর-সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাটস্থ ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ৮৬ কিলোমিটার সড়কপথ।
২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য হবে সুপ্রসন্ন। যার ইতিবাচক ফল ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা খাদেমুল, শামীম ও এনামুল হক বলেন, হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুর কাজ শেষ হলে এটি হবে উত্তরাঞ্চলের নদীপারের মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। যাতায়াত ও কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ হবে।
নিশ্চিত হবে ফসলের ন্যায্যমূল্য। দুই পাশে নদী শাসন করায় কমবে নদী ভাঙন। একই সঙ্গে নদীপারের হাজারও মানুষের ব্যবসার প্রসার ঘটবে।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে সেতু এলাকার দুই পাশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন অনেকে। অসংখ্য দোকানপাট, খাবার হোটেল ও রেস্টুরেস্ট গড়ে উঠেছে। জমির দামও বাড়ছে। তিনি বলেন, আন্ত উপজেলা সংযোগের ক্ষেত্রেও তিস্তা সেতু বড় ভূমিকা রাখবে।সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার লেবু জানালেন, সুন্দরগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও প্রত্যাশার এই তিস্তা সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য আসবে।
কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে অন্তত ১০০ কিলোমিটার।স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাবিবিউল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৪০ ভাগ। আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, নদীভাঙন, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের নদীতীরবর্তী এলাকা বা চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। অথচ এই এলাকায় তাদের পরিশ্রমের কারণেই কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যাপক বেড়েছে। তিস্তা সেতুর মাধ্যমে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম তো বটেই, পুরো রংপুর অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।
এ জাতীয় আরো খবর..