ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনের আসরে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির উপায় সবাইকেই খুঁজতে হবে। সেই দায়িত্ব আজ আমাদের প্রত্যেকের ওপর বর্তেছে।’ মোদি বলেন, ‘এটা যুদ্ধের সময় নয়।
আরও পড়ুনঃফায়ার সার্ভিসকে যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ নিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী
কূটনীতির রাস্তায় কী করে ফেরা যায়, তার খোঁজে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।’ মঙ্গলবার সকালে শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের ইংরেজি অনুবাদ প্রচার করে।
নিজের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি এ আহ্বান জানিয়ে মঙ্গলবার বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় তৎকালীন বিশ্বনেতৃত্ব শান্তির পথে প্রত্যাবর্তনে প্রচণ্ডভাবে এগিয়ে এসেছিলেন। আজ সেই দায়িত্ব চেপেছে আমাদের ওপর। পৃথিবীকে শান্ত, সমৃদ্ধশালী ও নিরাপদ করে তুলতে আমাদের সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। এটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’ প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘আগামী বছর জি–২০ নেতারা যখন বুদ্ধ ও গান্ধীজির দেশে (ভারত) মিলিত হবেন, আমি নিশ্চিত, তখন আমরা সবাই বিশ্ববাসীকে শান্তির বার্তা দিতে পারব।’
ভারত আগামী ১ ডিসেম্বর জি–২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। আগামী বছর অনুষ্ঠিত হবে শীর্ষ সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর ভাষণে ইউক্রেনের সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড মহামারির বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করে বলেন, ‘এর ফলে গোটা বিশ্বে সরবরাহব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব দেখা দিয়েছে। চারদিকে হাহাকার। প্রতিটি দেশের দরিদ্রদের অবস্থা দুর্বিষহ। দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করা তাদের কাছে কঠিন হয়ে উঠেছে।’
মোদি বলেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই, জাতিসংঘের মতো বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান এই সংকটের মোকাবিলায় ব্যর্থ। আমরাও প্রয়োজনীয় সংস্কারে ব্যর্থ হয়েছি। আর তাই, জি–২০ নেতৃত্বের কাছে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। এই গোষ্ঠীর প্রাসঙ্গিকতাও বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ।’
এই পরিসরে প্রধানমন্ত্রী মোদি জ্বালানি নিয়ে ভারতের অবস্থান আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া থেকে ভারত জ্বালানি আমদানি বাড়িয়ে তুলেছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রশক্তির কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ভারতকে। কিন্তু ভারত তার অবস্থানে অটল থেকেছে। আজ মোদি আরও একবার ভারতীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে ভারতের জ্বালানিনিরাপত্তা জরুরি।
কারণ, ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি। জ্বালানি সরবরাহ এবং শক্তির বাজার স্থিতিশীল রাখতে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা ঠিক হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও পরিবেশের জন্য ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎশক্তির অর্ধেক উৎপন্ন হবে নবায়নযোগ্য সূত্র থেকে। শীর্ষ সম্মেলনের আসরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সরকারি সূত্রের খবর, সেখানে মোদি খাদ্যসংকট ও নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন।